![](https://www.ukhiyanews.com/wp-content/uploads/cow-ctg.jpg)
সীমান্ত দিয়ে আসছে প্রচুর বার্মিজ গরু, আর এ গরু সীমান্ত পার করতে কাজ করছে আন্তর্জাতিক মাফিয়াসহ দেশের শীর্ষ সন্ত্রাসীরা। প্রতিদিন গরু পাচার করতে শ্রমিক হিসাবে যারা কাজ করছে সবাই দেশের শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসাবে চিহ্নিত বলে জানা গেছে। আর গরু পাচার করতে ব্যবহার করছে ভারী অস্ত্র।
কক্সবাজারের কচ্ছপিয়া ও গর্জনিয়া এলাকা ও সীমান্তবর্তী উপজেলার নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত এলাকা অরক্ষিত থাকায় মিয়ানমার থেকে আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা দিয়ে প্রতিদিন প্রবেশ করছে শত শত গরু-মহিষ। দুই উপজেলায় এ পাচারচক্র গড়ে গত এক বছরে অঢেল টাকার মালিক হয়েছেন অনেকে। এ চক্র এতটাই শক্তিশালী যে, তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপরও হামলা চালাতে পিছপা হয় না। এমনই এক ঘটনায় গত বছরের এপ্রিল মাসে ২৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে নাইক্ষ্যংছড়ি ১১ বিজিবি। ইতঃপূর্বে সীমান্তের ওপার থেকে প্রতিদিন গরু আসছে। সম্প্রতি ৫ আগস্টে সরকার পতন হলে রশিদ নগর এলাকা হয়ে সড়ক পথে বিভিন্ন উপায়ে অবৈধ গরু যাতায়াত করছে দেখে কিছু সুবিধাবাদী সন্ত্রাসীচক্র তাদের আটক করে ও প্রশাসনের নাম ভাঙিয়ে মোটা অঙ্কের চাঁদা আদায় করছে বলে খবর রয়েছে। তবে এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না বলে জানান রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাশেদুল ইসলাম।
জানা গেছে, সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে আনা গরু প্রথমে গ্রামের কচ্ছপিয়া, উখিয়ার ঘোনা গর্জনিয়া ইউনিয়নের বড়বিল, ক্যাজরবিল, জোয়ারিয়ানারা ইউনিয়ন, রশিদ নগর ইউনিয়নের বিভিন্ন জায়গা মজুত করে পরবর্তী দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাচার করা হচ্ছে।
সম্প্রতি প্রতিবেদক সিমান্ত এলাকা ঘুরে এসে গরু পাচারের বেশ কয়েক জনের সরাসরি জড়িত এমন কিছু গরু পাচারকারির নাম উঠে এসেছে। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ভালোবাসা, কম্বনিয়া, তুমব্রু, বাম হাতিরছড়া, ফুলতলী, চাকঢালা, লম্বাশিয়া, ভাল্লুকখাইয়া, দৌছড়ি, বাইশফাঁড়ি, আশারতলী, জামছড়ি এবং রামুর হাজিরপাড়া ও মৌলভীরকাটা দিয়েও চোরাই পথে মিয়ানমারের গরু আসছে। সীমান্ত এলাকার লোকজন জানিয়েছেন, চিহ্নিত ১৫ ব্যক্তির নেতৃত্বে দুই শতাধিক চোরাকারবারি বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। ট্রাকযোগে এসব গরু পৌঁছে যাচ্ছে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এখানকার কিছু লোকের সহায়তায় বেশিভাগ টাঙ্গাইল ভোয়াপুরের শাহিন, বি. বাড়িয়ার সেন্টু মিয়া এই দুই জনের গরু পাচারে সহায়তা করছে জোয়ারিয়ানালার শাকিল নামের একজন।
আরো যারা গরু পাচারের গড়ফাদার হিসাবে নাম শোনা গেছে, তারা হলেন, চাকমারকুলের আবু তাহের, উখিয়ার কিং জয়নাল, ঈদগাও এলাকার আমান খুশবো ও রমজান, চকরিয়ার বাবুল ও আব্দু রহিম, টাঙ্গাইল ভোয়াপুর, এলাকার মোহাম্মদ আলম ও হারুন, খোকন, টেকনাফ থেকে আমিন, ঘুমধুমের মিজান মাস্টার ও কুমিল্লার মিজানের নাম উঠে এসেছে। তারা সরাসরি মায়ানমার সিমান্তে গিয়ে মায়ানমার নাগরিকদের সঙ্গে কথা বলে গরু ক্রয় করে স্থানীয় জোয়ারিয়ানালা, কচ্ছপিয়া, রশিদ নগর, গর্জনিয়া, কাউয়ারখোপ এলাকার অস্ত্রধারি কিছু সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে সিমান্ত পার করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় গরু পাচার করছে বলে খবর রয়েছে।
এদিকে সরেজমিন গিয়ে বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যায় এসব গরু পাচারকারীদের সঙ্গে সহায়তাকারী হিসাবে কাজ করছে জোয়ারিয়ানালা ছাত্রলীগ নেতা শাকিল, ছাত্রলীগ নেতা ডালিম, নিষিদ্ধ ছাত্র সংগঠন কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দামের বড়ভাই শুক্কুর, শফিকুর রহমান, নুরুল আবছার, রামু চেরাংঘাটা মোশাররফ ও ইউনুস। কাউয়ারখোপ ইউনিয়ন থেকে বাবু, খোকন, যুবলীগ সহসভাপতি, সুজন, সাবেক এমপি কমলের একনিষ্ট রাকিব, হাসান, বহু মামলার আসামি মোশাররফ, যুবলীগ নেতা আব্দুল্লাহ, যুবলীগ সভাপতি আজিম, যুবলীগ সভাপতি সোহেল, যুবদল নেতা জহির, বহু মামলার আসামি রুবেল, হাসান, শানু, ইকবাল, সমন্নয়ক পরিচয়দানকারী শাকিল রশিদ নগর এলাকার ডাকাত সাদ্দাম, ডাকাত মোস্তাক, তৈয়ব উল্লাহ, কৃষকদল নেতা আবছার, শাহাবুদ্দিন, সাবেক হুইপ এমপি কমলের ক্যাশিয়ার ইসলাম। খরুলিয়া থেকে মিজানসহ আরো বেশ কয়েকজন কাজ করছে বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দেশীয় খামারের গরু দাবি করে মিয়ানমার থেকে আনা অবৈধ গরুর জাল সনদ তৈরি করে বৈধ দেখিয়ে গরু পাচার করা হচ্ছে দেশের বিভিন্ন জায়গায়। প্রতিটি গরু ও মহিষ মিয়ানমার থেকে ৬০ হাজার থেকে ৭৫ হাজার টাকায় কিনে তা বিক্রি করা হয় ১ লাখ থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকায়। মাঝে মধ্যে মালিকবিহীন গরু আটক হলেও চোরাকারবারিরা রয়ে যায় অধরা। এ অবস্থায় সীমান্তে গরু মহিষ ও মাদকপাচার নিয়ে সচেতন মহলের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। আর মাত্র কয়েকটি ছোট পাহাড় পাড়ি দিয়ে সহজে হেটেই যাওয়া যায় সেখানে। এদিকে মিয়ানমারের গরুর দামও তুলনামূলক এদেশের তুলনায় অনেক কম। আর অল্পপুঁজিতে বেশি লাভ হওয়ায় সম্প্রতি নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ও বাইশারী ইউনিয়নের বেশিরভাগ জন প্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা ও কিছু মিডিয়াকর্মী স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এ গরু পাচারের সঙ্গে লিপ্ত হয়েছেন।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, আগে আলীকদম ও লামা পথে বার্মিজ গরু মিয়ানমার থেকে পাচার হলেও বর্তমানে চোরাই গরু পাচারকারীরা তাদের পথ পাল্টে নিয়েছেন নতুন পথ। বর্তমানে নাইক্ষ্যংছড়ির সদর ও বাইশারী ইউনিয়নের বিভিন্ন পথে অবাধে গরু পাচার করে আসছে। তাদের দাবি, এ গরু পাচারের কারণে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াত নেতাকর্মীরা সবাই এক হয়ে গেছে। আবার স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও ব্যবসায় নিজেকে জড়িয়ে ফেলেছেন। এসব গরু পাচারের সময় পাচারকারীদের কাছে অত্যাধুনিক অস্ত্র থাকার কারণে তাদের কাছে কেউ যেতে সাহস করছে না।
এদিকে সিমান্ত এলাকা গর্জনিয়া বাজার ইজারাদার মো. রহিম উদ্দিন অবৈধ পাচারকৃত গরু/মহিশ ও পণ্য প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিতে গত বছরের নভেম্বরের ৪ তারিখ রামু উপজেলা বরাবর আবেদন দাখিল করে। এর ওপর ভিত্তি করে গত ৩০ ডিসেম্বর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রামু উপজেলার বিভিন্ন দফতরকে তা অবগত করে চিঠি প্রদান করে।
ইজারাদার রহিম উদিন জানান, অবৈধ পণ্যের কারণে বাজার ইজারার টাকা তুলতে হিমশিম খাচ্ছি। সব পণ্য চোরাই পথে চলে যাচ্ছে। স্থানীয়রা বাজারের নিজস্ব পণ্য তুলার সুযোগ পাচ্ছে না বিধায় টোল আদায় কম হচ্ছে। আশা করছি প্রশাসন এই অবৈধ গরু পাচার বন্ধ করবে।
রামু উপজেলায় অবৈধ গরু পাচার নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাশেদুল ইসলাম জানান, অবৈধ গরুসহ অবৈধ পণ্য সামগ্রী পাচার রোধে কাজ করছে উপজেলা প্রশাসন। অবৈধ গরু পাচার বন্ধে সংশ্লিষ্ট দফতরকে চিঠি মাধ্যমে অবগত করা হয়েছে। আশা করছি সংশ্লিষ্ট দফতর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। সম্প্রতি রামুর রশিদ নগর এলাকায় কিছু বিভ্রান্তির পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল তা বন্ধ করা হয়েছে। সুত্র,খোলা কাগজ
![](https://www.ukhiyanews.com/wp-content/uploads/add1.gif)
পাঠকের মতামত